বর্তমানে সামর্থ থাকলে একটি নিজের গাড়ি থাকা অপরিহার্য। আমাদের যাদের বাজেট কম তারা নতুন গাড়ির পরিবর্তে পুরোনো গাড়ি কেনার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকি।
ব্যবহৃত গাড়ি কেনা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে, তবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে আপনি সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হলো যা ব্যবহৃত গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত।
১. গাড়ির কাগজপত্র ও মালিকানা
গাড়ির মালিকানা এবং কাগজপত্রগুলি যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলি পরীক্ষা করা উচিত:
রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (RC): গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং মালিকানার প্রমাণপত্র। গাড়ির মালিক আপনাকে সাথে সাথে মালিকানা বদল করবেন কিনা নিশ্চিত করুন। গাড়ির পেপারস আপডেট আছে কিনা দেখুন। অন্তত ছয় মাস আপডেট থাকা গাড়ি কিনুন।
ইনস্যুরেন্স পলিসি: গাড়ির বীমা কভারেজ নিশ্চিত করা।
BRTA পেপারস যাচাই : গাড়ির কাগজপত্র BRTA তে যাচাই করুন এবং কোন মামলা আছে কিনা দেখুন।
ফাইন্যান্সিয়াল কাগজপত্র: যদি গাড়ি কোন ঋণের উপর থাকে, তা চেক করুন।
চ্যাসিস ও ইঞ্জিন নাম্বার যাচাই: চ্যাসিস ও ইঞ্জিন নাম্বার গাড়ির কাগজপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখুন। এগুলো ফিটনেস পেপারে পাওয়া যাবে।
২. গাড়ির বাইরের অবস্থা
গাড়ির বাহ্যিক অবস্থা পরীক্ষা করা উচিত যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ কেমন ছিল।
- বডি: গাড়ির বডিতে কোন ডেন্ট বা স্ক্র্যাচ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- পেইন্ট: গাড়িতে রংয়ের কাজ হয়েছে কিনা দেখুন। ব্যবহৃত গাড়িতে কিছু রংয়ের কাজ স্বাভাবিক।
- চাকা ও টায়ার: টায়ারের অবস্থা এবং ট্রেডিং চেক করুন। টায়ার নতুন বা ভালো অবস্থায় আছে কিনা দেখুন।
- নাম্বার প্লেট পরীক্ষা: সামনের ও পেছনের নাম্বার প্লেট সোজা আছে কিনা দেখুন। মাইর খাওয়া থাকলে প্লেট সোজা থাকবে না।
- গাড়ির অন্যান্য ক্ষতি পরীক্ষা: গাড়ির অন্যান্য অংশে ক্ষতি আছে কিনা দেখুন। ভাড়ায় চালিত গাড়ি হলে পেছনের অংশে ক্ষতি থাকতে পারে। দাম কম পেলে কিনতে পারেন।
৩. ইঞ্জিন ও মেকানিক্যাল পার্টস
গাড়ির ইঞ্জিন এবং অন্যান্য মেকানিক্যাল অংশগুলি ঠিকঠাক আছে কিনা তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।
- ইঞ্জিন: ইঞ্জিন থেকে কোন ধরণের অস্বাভাবিক শব্দ হচ্ছে কিনা এবং ইঞ্জিনের অয়েল লেভেল ঠিক আছে কিনা।
- গিয়ারবক্স ও ক্লাচ: গিয়ার সঠিকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এবং ক্লাচে কোন সমস্যা আছে কিনা।
- ব্রেক: ব্রেক ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, কোন ধরণের ঝাঁকুনি বা শব্দ হচ্ছে কিনা।
- চ্যাসিস পরীক্ষা: গাড়ির বনেট তুলে চ্যাসিস দেখুন, এটি মেরামত হয়েছে কিনা। চ্যাসিস গাড়ির মেরুদণ্ড এবং এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাড়ির স্থায়িত্বে সমস্যা হতে পারে। যদি চ্যাসিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে গাড়িটি না কেনাই ভালো।
- ইঞ্জিন ধোঁয়া পরীক্ষা: ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর অয়েল গেজ তুলুন এবং এক্সেলেরেটর প্যাডেলে চাপ দিন। সাদা ধোঁয়া বের হলে ইঞ্জিনে সমস্যা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে
- গিয়ারবক্স পরীক্ষা: ইঞ্জিন স্টার্ট করে স্টিয়ারিং সিটে বসুন এবং হেডলাইট অন করুন। ব্যাক গিয়ারে দিন, যদি ঝাঁকি দেয় তবে গিয়ারবক্সে সমস্যা আছে। অন্যান্য গিয়ারগুলো পরীক্ষা করুন, স্মুথলি শিফট হয় কিনা দেখুন।
- স্টিয়ারিং ও ফেন্ডার পরীক্ষা: স্টিয়ারিং সম্পূর্ণ ডানে-বামে ঘুরিয়ে ফেন্ডারের নিচে ঝালাই আছে কিনা দেখুন। ঝালাই থাকলে বুঝতে হবে গাড়িটি মার খেয়েছে।
- সিএনজি সিলিন্ডার পরীক্ষা: গাড়িতে সিএনজি থাকলে সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখুন।
- সাসপেনশন পরীক্ষা: ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে সাসপেনশনের অবস্থা যাচাই করুন।
৪. ইলেকট্রনিক্স ও ইন্টেরিয়র
গাড়ির ভিতরের অংশ এবং ইলেকট্রনিক্স পরীক্ষা করা উচিত।
- অভ্যন্তরীণ অবস্থা: সিট, ড্যাশবোর্ড, এবং অন্যান্য ইন্টেরিয়র উপকরণগুলি ঠিকঠাক আছে কিনা।
- এসি ও হিটিং: ইঞ্জিন স্টার্ট করে এসি চালু করুন। পর্যাপ্ত ঠান্ডা হয় কিনা এবং হিটার ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা দেখুন।
- ইলেকট্রিক্যাল ফিচারস: লাইট, ইন্ডিকেটর, পাওয়ার উইন্ডো, এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল অংশগুলি পরীক্ষা করুন।
৫. টেস্ট ড্রাইভ
গাড়ির সমস্ত কিছু সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে টেস্ট ড্রাইভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা: গাড়ি চালিয়ে দেখুন, স্টিয়ারিং মোড় নেওয়ার সময় কোন বাজে আওয়াজ হয় কিনা বা কোন সমস্যা অনুভব হচ্ছে কিনা।
- ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা: ইঞ্জিনের পাওয়ার এবং রেসপন্স চেক করুন।
- সাসপেনশন ও স্টিয়ারিং: সাসপেনশন এবং স্টিয়ারিং ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।
৬. সার্ভিস হিস্ট্রি
গাড়ির সার্ভিস হিস্ট্রি যাচাই করা উচিত। এর মাধ্যমে গাড়ির পূর্বের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
৭. দাম ও নেগোসিয়েশন
সঠিক বাজার মূল্য যাচাই করে গাড়ির দাম নিয়ে আলোচনা করুন। অতিরিক্ত খরচ এড়াতে সব দিক থেকে বিশ্লেষণ করুন। যে গাড়িটি কিনেছেন তার বাজার দর কেমন যাচাই করুন। অপরিচিত মালিকের কাছ থেকে না কিনে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনুন। ব্যবসায়ীরা সাধারণত কম ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি বিক্রি করেন এবং অনেক বিষয় বুঝিয়ে দেন।
৮. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
গাড়ি কেনার আগে একজন অভিজ্ঞ মেকানিক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এতে করে গাড়ির যেকোনো অদৃশ্য সমস্যা ধরা পড়বে। অযোগ্য মিস্ত্রি দিয়ে গাড়ি পরীক্ষা করাবেন না। তারা মালিকের সাথে মিলিত হয়ে আপনাকে ঠকাতে পারে।
ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময় উপরের বিষয়গুলি মাথায় রেখে চললে আপনি একটি ভালো এবং নির্ভরযোগ্য গাড়ি কিনতে পারবেন। মনে রাখবেন, একটু বাড়তি সতর্কতা আপনাকে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
গাড়ি কেনার পর আপনার শখের গাড়ির যত্ন নিন।
এক্সস্ট ধোঁয়া পরীক্ষা: সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে কালো বা সাদা ধোঁয়া বের হয় কিনা দেখুন। হলে ইঞ্জিনের কাজ করাতে হবে।